জ্ঞানী-গুণীজনেরা বলেছেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য-জীবন জীবনের জন্য’ এবং সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ যা করতে পারে পৃথিবীর অন্য কোন প্রাণীর পক্ষে তা করা সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জ্ঞানীগুণী সমাজসেবক মহৎপ্রাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন।
১৮২৮ সালের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রমভার দেইনিতে জীন হেনরী ডুনান্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জীন জ্যাকুয়াস ডুনান্ট এবং মাতা এ্যানা এন্টো ইনেট কোলাডন। ১৮৫৯ সালের ২৪ শে জুন উত্তর ইতালীর সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে মানব ইতিহাসের ভয়াবহতম যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে সমাজসেবামূলক কাজের সাথে সংশিস্নষ্ট হন যা তিনি অমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন। ১৮৬২ সালের নভেম্বর মাসে A Memory of Solferino (সলফেরিনো স্মৃতি) নামক গ্রন্থ রচনা করেন, যা পৃথিবীতে সে সময়ে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৬৩ সালের ৯ই ফেব্রম্নয়ারি হেনরী ডুনান্ট ও অপর ৪ জন সদস্য নিয়ে Committtee of Five গঠন করেন। ১৮৬৩ খ্রীঃ ২৬ শে অক্টোবর বিশ্বের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক মানব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রসের জন্ম লগ্নে প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০১ খ্রীঃ ডিসেম্বর মাসে শাম্মিতে তিনি প্রথম ‘নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ১৯১০ খ্রীঃ ৩০শে অক্টোবর পূর্ব সুইজারল্যান্ডের হেইডনে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ।
১৮৫৯ সালের ২৪ শে জুন তৎকালীন ইউরোপের দুই বৃহৎ শক্তি ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ইতালীর এক পলী প্রান্ত্তুর সলফেরিনোতে তুমুল যুদ্ধ হয়। মোট তিন লক্ষ সৈন্যের মাত্র ১৫ ঘন্টা যুদ্ধে শুধুমাত্র আহতদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ হাজার। একদিকে বিজয়ী সৈন্যরা বিজয় উৎসবে মত্ত আর অন্যাদিকে ৪২ হাজার আহত মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণার আর্তনাদ। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মানব জীবনের প্রতি এই চরম অবজ্ঞা মানবসেবী ডুনান্টের হৃদয়ে দারণভাবে রেখাপাত করে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সকল ব্যবসায়িক কর্মসূচী বাতিল করে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
মহাত্মা জীন হেনরী ডুনান্ট ও তাঁর চারজন সহকর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন ও সহায়তার আশায় ১৮৬৩ সালে ২৬ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহবান করেন। মোট ১৬ টি দেশের প্রতিনিধি উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন ও হেনরী ডুনান্টের প্রস্থাব অনুযায়ী রেডক্রস নামে একটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক নিরপেক্ষ সংস্থা গঠিত হয়। বর্তমান বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক মানবসেবামূলক সংস্থা রেড ক্রস এমনি ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে জন্ম লাভ করে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের সংগঠন সমূহঃ আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইআরসি) ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) ও জাতীয় রেড ক্রস’ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সমন্বয়ে বিশ্বব্যাপী রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি বা আইসিআরসি হচ্ছে রেডক্রস আন্দোলনের জন্মদাতা সংস্থা। ১৮৬৩ সালে ২৬শে অক্টোবর জেনেভা অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গঠিত রেডক্রসই হচ্ছে আইসিআরসি সংগঠনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডের ২৫ জন নাগরিক নিয়ে এই কমিটি গঠিত। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে আইসিআরসি আহত সামরিক/বেসামরিক লোকের সেবা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা নিপাপত্তার ব্যবস্থা ও ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা করে থাকে। যুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে যুদ্ধ বন্দীদের তদারকী ও বিনিময়ের ব্যবস্থা করে থাকে। জেনেভা কনভেনশনের সংরক্ষণ ও প্রয়োগ কেবলমাত্র আইসিআরসি সম্পাদন করে থাকে। ১৯৪৯ সালের ২২ শে আগস্ট অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে পূর্ববর্তী সকল কনভেনশনের বিধিসমূহ চূড়ান্ত করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি)বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সমূহের সমন্বয়ে ইন্টারন্যানাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস ও রেড ক্রিসন্টে সোসাইটিজ গঠিত। ১৯১৯ সালে ৫ই মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থায়ীভাবে এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। আইএফআরসি বিশ্বের সকল জাতীয় রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সমূহের মধ্যে বন্যা, ঘুর্ণিঝড় দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুঃস্থদের সাহায্যার্থে বহুবিদ সেবামূলক কাজ করে থাকে। ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসের সাধারণ পরিষদের সভায় লীগ অফ রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ এর নাম পরিবর্তন করে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ করা হয়।
নামকরণ ও প্রতীকঃ আইসিআরসি একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসাবে পৃথিবীর দেশে দেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার সুবিধার্থে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি প্রতীকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই প্রয়োজনবোধ থেকেই সহজেই চেনা যায় এমন একটি প্রতীক নির্ধারণ করা হয় এবং তা হল সাদা জমিনের উপর লাল ক্রস চিহ্ন। যা সেবক দল বাহুবন্ধনী হিসেবে ব্যবহার করবে। এই অসাধারণ চিহ্ন কার দ্বারা প্রস্থাবিত তা পরিস্কার নয়। তবে যাই হোক প্রতীকটি সুইস পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের (অর্থাৎ সাদা জমিনে লাল ক্রস চিহ্ন)। উক্ত সম্মেলনের প্রতিনিধিবৃন্দ আজকের পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিচিত একটি প্রতীকই শুধুমাত্র নির্বাচন করেননি বরং যে মাটিতে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই সুইজারল্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশনে সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে কোন প্রকার আপত্তি ছাড়াই সকল দেশ কর্তৃক ‘রেডক্রস’ প্রতীকটিকে স্বীকার করে নেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৮৭৬ সালে রাশিয়া ও তুরস্কের সাথে যুদ্ধ হলে থেকে বিভিন্ন মহল উক্ত প্রতীকটিকে খ্রীস্টান ধর্মের একিট ‘চিহ্ন’ বলে উলেখ করতে থাকে । এবং ভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের দাবী তুলতে থাকে। তখন তুরস্কের জাতীয় পতাকার অনুরূপ বিপরীত রঙের রেড ক্রিসেন্ট প্রতীক ব্যবহার করেন। অতঃপর ১৯২৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে কিছু আপত্তি সত্ত্বেও আরো দুইটি প্রতীককে মেনে নেযা হয়। সেগুলো হল রেড ক্রিসেন্ট এবং ও রেড লায়ন এন্ড সান। ১৯৪৯ সালের কুটনৈতিক সম্মেলনে প্রতীক দুইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থা তিনটি প্রতীককে একই লক্ষ্য ও আদর্শ ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু আবার ১৯৮০ সালে রেড লায়ন এন্ড সান সোসাইটি (ইরান) তাদের প্রতীক পরিবর্তন করে। ফলে বর্তমানে এই সংস্থার প্রতীক তিনটি (১) রেডক্রস (২) রেড ক্রিসেন্ট ও (৩) রেড ক্রিস্টাল।
১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্থান রেডক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্থান শাখা বাংলাদেশের জাতীয় রেডক্রস সোসাইটি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৮ সালে ৪ঠা এপ্রিল হতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তিত হয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হয়।
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রশাসনিক জেলায় ৬৪টি ও ৪টি সিটি করপোরেশনে ৪টি সর্বমোট ৬৮টি ইউনিট রয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সারাদেশ ব্যাপী নানাবিধ আর্তমানবতার সেবা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকার প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে (পিও ২৬/১৯৭৩)। সেহেতু, দেশের সার্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বাভাবিক সময়ে ও প্রতিটি দুর্যোগে ৬৮টি ইউনিট এর স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিপন্ন মানবতার কল্যাণে সোসাইটির ৫টি বিভাগের আওতাধীন ২৬টি অধিদপ্তরের মাধ্যমে গণ মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত। যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতদের সেবা ও নিহতদের সৎকার করার উদ্দেশ্যে রেডক্রসের জন্ম হলেও এর সেবা ও কর্ম-পরিধি বর্তমানে ব্যাপক এবং বিস্তৃত । সোসাইটি মূলতঃ সকল প্রকার দুর্যোগে গণ মানুষের মানবিক প্রয়োজনে সাড়া প্রদান করে থাকে ।
বন্যা, নদী ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকান্ড, প্রচন্ডশীত, ভূমিকম্প, ক্লাইমেইট চেঞ্জ অর্থাৎ সাম্প্রতিক বিশ্বায়নের কারণে আবহাওয়ার বিপর্যয় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে জরম্নরী ভিত্তিতে উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম, খাদ্য সামগ্রী, ঔষধপত্র, বস্ত্র, অস্থায়ী আশ্রয় সামগ্রী, নগদ অর্থ প্রদান করে থাকে। এমনকি অধিকতর জাতিগ্রস্থ বা বিধ্বস্থ এলাকার গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় গৃহ নির্মাণ, চাষাবাদের জন্য বীজ-সার প্রদান ও জীবন-জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে সংঘটিত শতাব্দীর প্রলয়ংকারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ গণমানুষের সেবায় সোসাইটির ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের জন্য দেশের দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি জেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী অসহায় গণ মানুষের বিপদাপন্নতা লাঘবে সোসাইটি ১৯৯৭ সাল হতে ‘সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচী’র মাধ্যমে গণ মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক জীবনহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলে ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী’ ( সিপিপি ) নামে একটি বিভাগ চালু করে। বাংলাদেশে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ ৭১০ কিঃ মিঃ প্রলম্বিত এলাকা জুড়ে বসবাসকারী সর্বাধিক বিপদাপন্ন জন গোষ্ঠিকে সম্ভাব্য দুর্যোগ হতে তাঁদের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার নিমিত্তে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রস্তুতি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উপর ভিত্তি করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এ কর্মসূচীর আওতায় ১১টি উপকূলীয় জেলার ৩১ টি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক সহযোগিতায় উপকূলীয় গণমানুষের মধ্যে HF ও VHF রেডিও সেট ও মাইক এর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংকেত প্রদান, সচেতনতা মূলক প্রচার, দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণাদান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান, দুর্যোগের পরে অপসারণ, উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং তাৎক্ষণিক ভাবে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ জরম্নরী ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯১ সালে সংঘটিত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে সোসাইটির উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সারা বিশ্বে সেবার অনন্য মডেল হিসাবে আস্থা অর্জন করেছে। উপকূলীয় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক জনগণকে নিয়মিত সচেতনতা মূলকপ্রচার ও দুর্যোগ সম্পর্কে ধারণাদানের ফলে বিগত ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সংঘটিত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ও ‘আইলা’ ১৯৯১ সালের মত জীবন ও সম্পদ এর জাতি হয়নি।
পৃথিবীর সকল দেশের মত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বাস্থ্য সেবার কর্মসূচীর অধীনে এ দেশের গণ মানুষের সেবায় ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৫টি স্বয়ংসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক মাতৃসদন হাসপাতাল, ৬৮টি গ্রামীণ মাতৃসদন কেন্দ্র, ৩টি আউটডোর ক্লিনিক, ২টি চক্ষু ক্লিনিক, ৬টি রক্ত কেন্দ্র, ১টি নার্সিং স্কুল, ৩টি ধাত্রী বিদ্যা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এইচ আইভি / এইডস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর সক্রিয় ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা, জরম্নরী মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে।
আজকের শিশু আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। একজন সৎ, যোগ্য ও প্রশিক্ষিত নাগরিক দেশের অমূল্য সম্পদ । স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রী বা যুব শ্রেণীর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সোসাইটির যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সোসাইটির অধিকাংশ কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশিক্ষিত যুব স্বেচ্ছাসেবকগণই প্রতিটি দুর্যোগে গণমানুষের সেবায় আত্মরিক ও নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে ।
এছাড়া সোসাইটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী, ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান কর্মসূচী (ইপিআরপি), রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ বিভাগ, অনুসন্ধান ও পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন বিভাগের মাধ্যমে গণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকার প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে। সেহেতু, দেশের সার্বিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং আতৃ মানবতার সেবায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় সদর দপ্তর সরাসরি এবং ইউনিটের মাধ্যমে বিপন্ন মানবতার সেবায় বিভিন্নমুখী কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যেমনঃ দুর্যোগ ত্রাণ ও পুনবার্সন কার্যক্রম, ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি), সিসিএ, ভিটুআর, স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, অনুসন্ধান, সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচী (সিবিডিএম), ওডি, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম, রক্তদান কর্মসূচী, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সিইপি, রেড ক্রিসেন্ট নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রচার এবং প্রসার, ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদান কর্মসূচী (ইউডিআর) প্রভৃতি।
ডাঃ শেখ শফিউল আজম
ম্যানেজিং বোর্ড মেম্বার,
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
• ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট।
leave your comments