নতুন বছর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে। আমাদের সামনে নতুন বছর, বঙ্গাব্দ ১৪৩০। আসছে নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন। প্রভাতে সবাই গেয়ে উঠবে—‘নব আনন্দে জাগো—আজি নব রবি কিরণে,/ শুভ্র-সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে!’ছয় শতাধিক বছর আগে বাংলা বছর চালুর পর থেকেই পহেলা বৈশাখ পালন বাঙালির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মুঘল সম্রাট আকবর তৎকালীন সুবে বাংলা থেকে জমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন চালু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজ আরো একটি বাংলা নতুন বর্ষে পদার্পন করতে যাচ্ছি আমরা।
সম্রাট আকবরের আমল থেকে পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালিত হচ্ছে। সে সময় সম্রাট খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। প্রাচীন কিছু বর্ষপঞ্জিকার সাহায্যে তৈরি করা হয় বাংলা বর্ষপঞ্জিকা। আকবরের আমল থেকেই চৈত্র মাসের শেষদিনের মধ্যে খাজনা দিতে হতো। এর পরদিন জমির মালিকরা নিজেদের এলাকার অধিবাসীদের মিষ্টি খাওয়াতেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’ পালন করতেন, অর্থাৎ নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন। তখন মূলত হালখাতারই উৎসব ছিল পহেলা বৈশাখ। এরপর ধীরে ধীরে নানা সংস্কার ও সংযোজনের পর বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয় এটি। এখন কিন্তু বাংলা একাডেমি পহেলা বৈশাখের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগে দু-একদিন আগে পরে হলেও এখন ইংরেজি বর্ষের ১৪ এপ্রিল বাংলা বছর শুরু হয়। বর্তমানে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলা নববর্ষ পালন করি। বৈশাখের প্রথম দিনে ভোরে উঠেই পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে বাঙালির। এছাড়া পহেলা বৈশাখে বাঙালি মেয়েদের মধ্যে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরার প্রচলন আছে। এখন অবশ্য সবাই লাল-সাদা পোশাক পরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেন।
বাংলাদেশের মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান যেমন পাকিস্তান আমলে এক দ্রোহ থেকে জন্ম নিয়েছিল, মঙ্গল শোভাযাত্রাও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু হয়েছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক নানা পটপরিবর্তন হয়েছে। তবে, এ দুটি আয়োজন সব সময় মানুষকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নেওয়ার প্রত্যয় জুগিয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতবে দেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানে গানে গানে, আনন্দ আয়োজনে নতুন বছরটিকে বরণ করে নেবে বাংলার মানুষ। সবার কণ্ঠে থাকবে—‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
স্বাগতম বাংলা নববর্ষ, শুভ হোক বাংলা নববর্ষ।
নতুন বাংলা বছর অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে বাঙালির জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক— এই হোক কামনা।
ফারজানা হুরীঃ বিশিষ্ট কলামিস্ট, নারীনেত্রী ও সংগঠক।
leave your comments