🖋️লেখক:পীরজাদা আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদুল্লাহ রজায়ী
আউলিয়া-ই-কেরামের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচ্যের রানী নামে পরিচিত বন্দর নগরী চট্টলার আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণকেন্দ্র আনোয়ারা থানার অন্তর্গত ওষখাইন আলী নগর দরবার শরীফ, যেখানে শায়িত আছেন চার তরিকার পীর বেলায়তের সম্রাট ছত্রিশ বৎসর বনবাসী ও কবি, সাহিত্যিক শাহ্ ছুফি আল্লামা সৈয়দ আলী রজা (রহঃ)। প্রাণ প্রিয় মোর্শেদ বাবাজান কেবলার পবিত্র দৌহিত্র আওলাদে আলী রজা শাহাজাদা সৈয়দ পীর মৌলানা নুরুল আলম রজায়ী (রহঃ) এমন এক যুগ সন্ধিক্ষনে পৃথিবীতে তাশরীফ আনেন যখন বিশ্ব মুসলমান নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ইসলামের সঠিক রূপরেখা সুন্নী মতাদর্শ বিচ্যুত হয়ে পড়েছে আধুনিক জাহেলিয়াত ও বাতিল মতাদর্শের খপ্পরে পড়ে ঈমান হারা হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মুসলমান শরীয়ত ও তরিকতের সঠিক দিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। ঠিক এমনি নাজুক পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্ব সুন্নী মুসলমানদেরকে ঐক্যের প্লাট ফরমে জামায়েত করার মানসে হযরত বাবাজান কেবলা কাবার ছোট। শাহজাদার পবিত্র ঔরসে এ পৃথিবীতে ত্রাণকর্তা রূপে আমাদের প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ কেবলা রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিকত হযরত শাহ ছুফি সৈয়দ নুরুল আলম রজায়ী (রহঃ) কে প্রেরণ করেন। সকলের মুখে ধ্বনিত হচ্ছে।মারহাবা ইয়া মারহাবা ইয়া মারহাবা হযরত নুরুল আলম বাবা মারহাবা ॥
বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবন :হযরত শাহ ছুফি সৈয়দ নুরুল আলম রজায়ী (রহঃ) বাল্যকালে স্থানীয় ফোরকানীয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। এর পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য জিরি ও শাহ্ চান্দ আউলিয়া মাদ্রাসায় কুরআন শরীফ ও ইলমে হাদীসের জ্ঞান অর্জন করেন।
কর্ম জীবন :শিক্ষা জীবন সমাপ্তান্তে তিনি বাবাজানের খিদমতেই নিয়মিত থাকতেন। বাবা জানের নজরে রেখে ফয়েজ দান করে আধাত্মিক জগতের যুগশ্রেষ্ঠ অলীরূপে গড়ে তোলেন।
চরিত্র মাধুর্য্য :মারেফাত ও তরীকতের ক্ষেত্রে শাহ্ ছুফি সৈয়দ নুরুল আলম রজায়ী (রহঃ) ছিলেন সমসাময়িক কালের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তাকে সবাই তাওহীদের ভান্ডার বলে উল্লেখ করতেন। তিনি ছিলেন নম্রভাষী এবং বিনয়ী। প্রতিদিন দূর দুরান্ত হতে বহু ভক্ত অনুরক্ত বাবাজানের দরবারে নানা রকম হাজত নিয়ে উপস্থিত হতেন এবং সব সমস্যার সমাধান দেয়ার খুবই চেষ্টা করতেন, তিনি একজন খাঁটি আশেকে রাসূল | ছিলেন। বাবাজান কেবলা হক সম্পর্কে খুবই সজাগ থাকতেন। এমনকি কোন লোক বাবা জানের ঘরে কাজ কর্ম করতে আসলে যাওয়ার সময় তার ঘাম পড়ার পূর্বে তার বেতন দিয়ে দিতেন। তিনি সব সময় সুন্নতের অনুসারী অবস্থায় থাকতেন ।
বায়াত:তাঁর আব্বাজান হযরত ছৈয়দ আব্দুল হাই রজায়ী (রহঃ) তাকে ডেকে নিয়ে একান্তে | বসায়ে খাছভাবে বয়াত করান এবং একমাত্র সাজ্জাদানশীন হিসেবে খিলাফত দান। করে বায়াত করার অনুমতি প্রদান করেন। সেদিন থেকেই তিনি তরীকতের ও সিলসিলার খিদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কামালিয়াতের এমন এক উঁচু মক্কামে সমাসীন হয়েছেন যে, অসংখ্য কারামত তার উজ্জ্বল প্রমান। সম্প্রতি ১৯৭৭ সালে হুজুর কেবলার প্রথম শাহাজাদা পীর মৌলানা সৈয়দ একরামুল হক রজায়ীর প্রথম শাহাজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ এরশাদুল্লাহ রজায়ী পুকুরে পড়ে ইন্তিকাল করেন এবং হুজুর ঐ সময় হুজুরের ২য়া কন্যার নামাযে জানাযা সমাপ্ত করেছিলেন। জনৈক ব্যক্তি এসে হুজুর কিবলাকে বললেন, আপনার নাতী ইন্তেকাল করেছেন। শুনে বাড়িতে এসে দেখেন ঠিক তাই। সবাই তার কাফন, দাফনের ব্যবস্থা করেন। এমতাবস্থায় হুজুর সবাইকে বললেন তোমরা একটু অপেক্ষা কর। হুজুর তাকে জড়িয়ে ধরে বাবাজান কেবলার দরবারে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তাকে জীবিত অবস্থায় নিয়ে আসেন লোকেরা দেখে আশ্চর্য। এবং সেই দিন বলল আমার প্রথম শাহাজাদা ঔরসে দুইটি ফুল ফুটবে। একটি ফুল শরীয়তের হবে। আর একটি ফুল তরিকতের হবে। ঠিক তেমনি তাঁর বাণী অনুযায়ী তাই হয়েছে। প্রথম শাহাজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ এরশাদুল্লাহ রজায়ী শরীয়তের আলেম হচ্ছেন। দ্বিতীয় শাহাজাদা সৈয়দ খোরশেদুল্লাহ রজায়ী তরীকতের কাজ আঞ্জাম দিচ্ছেন। হুজুর কেবলা জীবিত অবস্থায় কোন প্রকার জিন প্রভাবিত লোককে হুজুরের নাম বললে ঐ রুগি ব্যক্তি ভাল হয়ে যেত।
রূহানীয়াতঃহযরত শাহ ছুফি সৈয়দ নুরুল আলম রজায়ী (রহঃ) এর ওফাতের পর সমগ্র উপমহাদেশ হতে প্রতিনিয়ত শত সহস্র প্রেম পিয়াসী ভক্ত অনুরক্ত ওষখাইন আলী নগর দরবার শরীফে ছুটে আসত। তার প্রথম শাহাজাদা সৈয়দ একরামুল হক | রজায়ী এর পবিত্র কদমতলে নিজেদের আত্ম সমর্পন করে ধন্য হত।
ওফাত :৫৫ বৎসর বয়সে এ নশ্বর জগতে আধ্যাত্মিক লীলা সমাপন করেন। ১-৪-৮৩ সনে | ১৭ই চৈত্র শুক্রবার তিনি আল্লাহ্র সান্নিধ্যে চলে যান (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)ওফাতের সময় তিনি পাঁচ শাহাজাদা ১ শাহ্তাদী ও ২ নাতী সহ বহু ভক্ত অনুরক্ত এবং আত্মীয় স্বজন রেখে চলে যান। প্রতি বছর ১৭ই চৈত্র ও ১৭ই আশ্বিন নূর মঞ্জিলে দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরামগণের ওয়াজ মাহফিলসহ মহা সমারোহে তার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়।
হুজুর কেবলার ইন্তেকালের পর নামাযে জানাযা :হুজুর কেবলার নামাযে জানাযা পড়ান তাঁর বড় ভাই পীর মৌলানা আলহাজ্ব সৈয়দ আমিনুল্লাহ (রহঃ) প্রথমত তার নামায ভূল হয়ে যায়। দ্বিতীয় বার নামাযে জানাযা আদায় করার পর বললেন যে, আমার নামায ভূল হওয়ার কারণ হলো। এই আমার চোখে দেখতে পেলাম যে, আমার ভাইয়ের লাশ কতগুলি সাদা কাপড় পরিধানকৃত লোক আসমানের দিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। দেখে আমি নামাযে জানাযা না পড়ে ঈদের নামাজ পড়েছি।
এমন কি হুজুর কেবলার ফাতেহার দিন খাওয়া, দাওয়া সমাপ্ত হয়ে গেলে (সেই দিন ছিল মঙ্গলবার) এক ব্যক্তি বাজার থেকে ফেরার পথে দেখতে পেল হুজুর | কেবলা স্বশরীরে অজু করে ঘরের দিকে যাচ্ছেন। এবং লোকটি তাকে বলল, হুজুর সেই দিন আমরা আপনার নামাজে জানাযা আদায় করলাম! তখন হুজুর তাকে বললেন, এই কথা আর কাউকে বলবে না, তার পর দিন ঐ লোক হুজুরের প্রথম শাহাজাদা পীর মৌলানা সৈয়দ একরামুল হক রজায়ীকে ৫০ টাকা। যিয়ারতের জন্য দিয়ে গেল এবং পূর্বের ঘটনা বলেন।
leave your comments