আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি:নেই কোনো প্রশাসনের অনুমোদন, আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৭৬ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছিলো ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কুরআন একাডেমী নামের মাদ্রাসা। এলাকাবাসীর রয়েছে নানা অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতন যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গি।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াপঞ্চক ইমাম আজম রহ. ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কুরআন একাডেমী নামের একটি মাদ্রাসায় ১২ বছরের ইশফাত মামুন রিয়াদ এক শিক্ষার্থীকে ব্লেড দিয়ে শরীরে আঘাত এবং মরিচের গুড়া দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষক হাফেজ আবু হানিফকে (৩০) আটক করে থানা পুলিশ।
আটককৃত হাফেজ আবু হানিফ উপজেলার বারশত ইউনিয়নে এবং পূর্ব গুয়াপঞ্চক ইমাম আজম রহ. ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কুরআন একাডেমী শিক্ষক। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। নির্যাতিত ইশফাত মামুন রিয়াদ উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের নলদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ টুন্টুর ছেলে এবং ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। এসময় স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশ এসে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে।
ছাত্রের বড়ভাই আসাদুজ্জামান ছোটন বলেন, গত বৃহস্পতিবার সে বাড়িতে গেলে তার পিটের এমন অবস্থা জিঞ্জেস করি। সে জানায়, হুজুর ব্লেড দিয়ে কেটে কাটাস্থানে মরিচের গুড়া দিয়েছে। কাউকে না বলার জন্যও ভয় দেখায়। এরপর তাকে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে মাদ্রাসায় আসি এবং মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ এটাকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্যও বলেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ আসে। এঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করব।
নির্যাতিত ছাত্র ইশফাত মামুন রিয়াদ জানায়, গত ১৯দিন আগে রাতে হুজুর ব্লেড দিয়ে কেটে মরিচের গুড়া লাগিয়ে দেন। আমি চিৎকার করলে মুখে কাপড় দিয়ে চেপে ধরে এবং গতকাল বুধবার পর্যন্ত মাদ্রাসায় আটকে রাখে।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়ায় আবাসিক একটি ভবনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করাচ্ছে তারা। প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনা ঘটছে এ মাদ্রাসায়। কিছুদিন আগেও ইয়াছিন আরাফাত নামে এক ছাত্রকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি স্বীকার করে অভিযুক্ত হাফেজ আবু হানিফ বলেন, গত ১৯ দিন আগে সন্ধ্যায় পড়া না পারার জন্য মারধর করেছি। এ জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যৎ এমন কাজ আর করব না।
জানতে চাইলে ইমাম আজম রহ. ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কুরআন একাডেমীর পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুর রহমান আল কাদেরী বলেন, ঘটনাটি সত্যি দুঃখজনক। কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন কান্ড কেউ কাম্য করেন না। শিক্ষকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা মুহাম্মদ হাসান বলেন, এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। আটককৃত শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
leave your comments