রাঙ্গুনিয়া প্রতিবেদকঃ “আজকে এক ভাইয়ের মৃত্যুতে খুবই মর্মাহত হয়েছি। কাল আমার আপনার ও হতে পারে। যে পরিমাণ গাড়ি চলে, সে তুলনায় রাস্তাটা কিছুই না। সিএনজি একটা গেলে অন্যটা থামিয়ে চলতে হয়। এবার হলে যান, স্যারের কাছে। বলেন। রাস্তা লাগবে।” গত কয়েকদিন আগে সড়কে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর সংবাদের পর ফেসবুকে এমন স্টাটাস দিয়েছিলেন এক যুবক। স্টাটাস দেওয়ার পর আজ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) সিএনজি অটোরিকশার সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে সে যুককের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের চন্দ্রঘোনা ইকোপার্ক এলাকায়।
নিহতের নাম কাজী মো. জুনায়েদ হোসেন রিফাত (২৫)। সে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের আলমশাহপাড়া কাজী বাড়ি এলাকার মো. পুতুলের সন্তান। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে গত দুই মাস ধরে ওয়ান ব্যাংক চন্দ্রঘোনা শাখায় কর্মরত ছিল সে। সূত্রে জানা যায়, বন্ধুদের সাথে সিএনজি অটোরিকশা যোগে কাপ্তাই মাছ আনতে গিয়েছিল রিফাত। আসার পথে কাপ্তাই সড়কের চন্দ্রঘোনা ইকোপার্ক এলাকায় এলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অটোরিকশাটির। এতে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার সাথে একই সিএনজি অটোরিকশায় ছিলো অপর বন্ধু মো. মিজান। আকষ্মিক এই দুর্ঘটনার পর তার বড় ধরনের কোন ক্ষতি না হলেও বেহুশের মতো নির্বাক অবস্থা হয়েছে তার। তিনি বলেন, তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে সকাল সকাল কাপ্তাই লেকের মাছ কিনতে গিয়েছিল। মাছ না পাওয়ায় বাড়ি ফিরে আসছিলেন। তার অপর বন্ধু ইসমাঈল হোসেন নয়ন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারটি খুব বেশি কাঁদাতো আমার বন্ধু রিফাতকে। প্রায়শই এই ব্যাপারে আমার সাথে আলাপ করতো সে। মরিয়মনগর ডিসি সড়ক সরু হওয়ার জন্য নিয়মিত যে দুর্ঘটনা ঘটে চলছিল, সেটা নিয়েও কয়েকদিন আগে সে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো। কিন্তু আজ সে নিজেই দুর্ঘটনায় মারা গেলো। দুইদিন পর আমাদের অপর এক বন্ধুর বিয়ে ছিল। তিনজন মিলে আমরা তার বিয়ের প্লান সাজিয়েছিলাম। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।
তিনি বলেন, আমার বন্ধু উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলো। বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় করার পরিকল্পনা করছিলো। এজন্য সম্প্রতি আমরা একটা গ্রুপ একাউন্টও চালু করেছি, সে সপ্তাহের প্রতি ছুটির দিন শেফের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো। কিন্তু তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী বলেন, দুর্ঘটনার খবরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ছি। ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়েছে। এটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এই বিষয়ে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা হবে। এদিকে তার মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সন্তান ছিলো রিফাত।
leave your comments